পৌর নির্বাচনে বিএনপির চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে বিএনপির কেন্দ্র থেকে জেলা পর্যায়ের নেতাদের বিএনপি ও জোটের পক্ষে একক প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে দলটির হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা দেওয়া সত্ত্বেও বেশিরভাগ পৌরসভাতেই রয়েছেন একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। এ নিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে দলের হাইকমান্ড।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা প্রমাণ করার ‘এসিড টেস্ট’ হিসেবে নিয়েছে পৌর নির্বাচন। অন্যদিকে গ্রেফতার এড়িয়ে নেতাকর্মীদের নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রাখাটাই প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপির সামনে। সেই সঙ্গে রয়েছে চূড়ান্ত প্রার্থীর মনোনয়ন টিকিয়ে রাখা, দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ ও জোটের মাধ্যমে ফলাফল অনুকূলে আনার নানামুখী চ্যালেঞ্জ।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ‘দলগতভাবে নির্বাচন হলে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে এটা আমরা অনেক আগেই আশঙ্কা করেছিলেন। এ ছাড়া নির্বাচনে সংঘাত- সহিংসতার আশংকাও থাকবে। আর বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের কথাই সত্য প্রমাণিত হতে যাচ্ছে।’
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণাকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে রাজনৈতিক দল একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারবে না। একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন জমা দিলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। এ ছাড়া মনোনয়নপত্রে দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরে প্রার্থীর প্রত্যয়ন থাকতে হবে।’
নির্বাচনকে সরকার ও কমিশনের জন্য বিএনপি ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে নিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘সরকার ও কমিশনকে বিএনপি একটি চান্স দিচ্ছে, যাতে আগামী পৌরসভা নির্বাচন তারা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে। আর যদি তারা তা না করে অতীতের মতো বিতর্কিত করে। তাহলে এ নির্বাচনেই সরকারের মরণঘণ্টা বেজে যাবে।’
এদিকে পৌর নির্বাচন উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ইতোমধ্যে মেয়র পদে একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। এদিকে দলের মনোনয়ন না পেলেও বিএনপির ত্যাগী নেতারা নির্বাচনী মাঠ ছাড়তে রাজি হচ্ছে না। নির্বাচনী মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। ইতোমধ্যে তারা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে অনেক বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলের মনোনয়নের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে নির্বাচনী এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন ও হরতালও ডেকেছেন। এ ছাড়া দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী মনোনয়নে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী।
রাজশাহীর কাঁটাখালী পৌরসভায় দলের মনোনয়ন না পেলেও প্রার্থী হচ্ছেন পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘চারদলীয় জোটের পক্ষে গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন জামায়াতের নেতা মাজেদুর রহমান। সেই সময়েও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তখন মাত্র ৫২ ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলাম।’
এ ছাড়া নওহাটা পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পাস করে যোগ্যতা প্রমাণ করে দেখাব।’
বিএনপির ‘সমন্বয় কমিটি’র অন্যতম সদস্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, ‘মনোনয়নের ব্যাপারে প্রার্থীদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সক্রিয় দেখা গেছে। বিএনপির বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের ভূমিকা কী ছিল, সে সব বিষয় বিবেচনা করেই প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নে যথেষ্ট গলদঘর্ম হতে হচ্ছে।’
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করার আগে সরকার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেননি। বিশেষ দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়া সত্ত্বেও আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। তারপরেও আমরা গুছিয়ে নিয়েছি।’
বিএনপির ‘সমন্বয় কমিটি’র প্রধান যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক দল হিসেবে পৌরসভা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছি। এ চ্যালেঞ্জ শুধু দলের জন্য নয়, দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার চ্যালেঞ্জ। আর এ চ্যালেঞ্জ নিয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকবে বিএনপি।’
বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা সময়ের ব্যাপার। সময়েই ঠিক হয়ে যাবে।’
৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৩ টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছেন নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের তারিখ ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৩ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছেন ইসি।
প্রথমে ২৩৪ পৌর সভার তফসিল ঘোষণা করে ইসি। সীমানা জটিলতার কারণে মংলা পৌরসভা নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এ কারণে ২৩৩ পৌরসভায় এখন ভোট অনুষ্ঠিত হবে।